পিরোজপুর প্রতিনিধি
পিরোজপুরের নূরানী গেট এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পরিবারের আটজন প্রাণ হারিয়েছেন। বুধবার গভীর রাতে কুয়াকাটা থেকে পিরোজপুরে ফেরার পথে একটি প্রাইভেটকার নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের খালে পড়ে যায়। দুর্ঘটনার পর গাড়িতে থাকা সকল আরোহীই প্রাণ হারান।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মুকিত হাসান খান জানান, রাত ৩টার দিকে পিরোজপুর-নাজিরপুর সড়কের নূরানী গেট এলাকায় প্রাইভেটকারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশের একটি খালে পড়ে যায়। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা গাড়ির ভেতর থেকে আটজনের মৃতদেহ উদ্ধার করে।
নিহতদের মধ্যে পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার হোগলাবুনিয়া গ্রামের শাওন মৃধা (৩২), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (৩০), ছেলে আবদুল্লাহ (৩) ও শাহাদাৎ (১০) ছিলেন। অন্যদিকে শেরপুর সদর উপজেলার রঘুনাথপুর এলাকার মোতালেব (৪৫), তার স্ত্রী সাবিনা আক্তার (৩০), মেয়ে মুক্তা (১২) ও ছেলে সোয়াইব (২) দুর্ঘটনায় মারা যান।
শাওনের খালাতো ভাই মুরাদ জানান, শাওন ও মোতালেব দুই পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে কুয়াকাটায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ফিরতি পথে তারা পিরোজপুরের হোগলাবুনিয়া এলাকায় শাওনের বাড়ির উদ্দেশে যাচ্ছিলেন। এসময় চালক নিয়ন্ত্রণ হারালে গাড়িটি খালে পড়ে যায়।
ঘটনার সময় স্থানীয়রা দ্রুত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে উদ্ধারকাজ শুরু হয়। পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. আসিফ হোসেন আটজনকেই মৃত ঘোষণা করেন। তিনি জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই সকলের মৃত্যু হয়েছিল।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুকিত হাসান আরও জানান, উদ্ধারকৃত একটি জাতীয় পরিচয়পত্র থেকে নিহত মোতালেবের পরিচয় নিশ্চিত করা হয়। মোতালেব সেনাবাহিনীতে সিভিল স্টাফ হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তার পরিচয় থেকে অন্যান্য নিহতদেরও শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
এ দুর্ঘটনায় নিহত শিশুদের করুণ মৃত্যু স্থানীয়দের মধ্যে শোকের ছায়া ফেলে। স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ দুর্ঘটনা খুবই হৃদয়বিদারক এবং পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে হারানোর দৃশ্য ছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া উইংয়ের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম জানান, রাত সোয়া ২টার দিকে পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা বাজার এলাকায় দুর্ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট, স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ মিলে যৌথভাবে উদ্ধারকাজ পরিচালনা করে।
এ দুর্ঘটনায় শিশু থেকে শুরু করে পরিবারের সব সদস্যদের মৃত্যু সবাইকে মর্মাহত করেছে। এলাকাবাসীর মতে, রাতের বেলা অন্ধকারের কারণে চালক হয়তো সঠিকভাবে গাড়ির গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। দুর্ঘটনাস্থল ছিল অত্যন্ত বিপজ্জনক এবং পথচারীদের সতর্ক না থাকলে যে কোনো সময় এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ অনুসন্ধান চলছে।
